কানাডায় নেই এমন আবেগপ্রবণ সমর্থকগোষ্ঠী:

ফুটবল ভক্ত

কেন দক্ষিণ এশিয়া, লাতিন আমেরিকা বা ইউরোপের মতো আবেগপ্রবণ সমর্থকগোষ্ঠী কানাডায় বিরল? বিশ্লেষণে উঠে এল সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও খেলাধুলার প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। ছবিঃ দ্যা ডেইলি ষ্টার

বিশ্বজুড়ে খেলার প্রতি আবেগ—একটি সামাজিক বাস্তবতা
খেলা শুধুই একটি বিনোদনের মাধ্যম নয়; এটি একটি সামাজিক বন্ধন, জাতিগত পরিচয়ের অংশ এবং অনেকের জীবনের অনুভূতির উৎস। বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে ফুটবল বা ক্রিকেটের মতো খেলায় সমর্থকদের যে আবেগ ও নিষ্ঠা লক্ষ্য করা যায়, তা অনেক সময় দেশপ্রেমকেও ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু এমন ভক্ত-ভিত্তিক আবেগপ্রবণতা কানাডার মতো উন্নত দেশগুলিতে তুলনামূলকভাবে কম। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে একজন জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ মন্তব্য করেন, “এই ধরনের আবেগপ্রবণ সমর্থকগোষ্ঠী কানাডায় নেই”—আর এই মন্তব্যই জাগিয়ে তুলেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক আলোচনার সূত্রপাত।

কানাডার ক্রীড়াসংস্কৃতি: পেশাদারিত্ব বনাম আবেগ
কানাডার ক্রীড়া কাঠামো মূলত পেশাদার লিগ, কর্পোরেট স্পনসর এবং সুসংগঠিত ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল। হকি, বেসবল, বাস্কেটবল কিংবা আমেরিকান ফুটবল মূলত ঘরোয়া দর্শকদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়। যদিও স্টেডিয়াম পূর্ণ থাকে এবং দর্শকরা চিয়ার করে, তবুও সেটি অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খল। এখানে রাস্তায় নেমে উদযাপন, দল হারলে চোখের জল বা রাত জেগে প্রার্থনার মতো দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না। আবেগ থাকলেও তা কখনোই গণআন্দোলনের রূপ নেয় না।

সাউথ এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার উদাহরণ
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান কিংবা ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলোতে খেলাধুলা প্রায় ধর্মের মতো। বিশেষ করে ফুটবল বা ক্রিকেট ম্যাচের সময় যেন পুরো জাতি একটি আবেগে ভাসে। প্রিয় দলের জন্য মিছিল, পতাকা, পোস্টার, এমনকি প্রতিপক্ষের ভক্তদের সঙ্গে সংঘর্ষ পর্যন্ত ঘটে। এসব দেশে খেলা মানেই জীবনের অংশ। এই ধরনের ফ্যানবেস তৈরি হয় সামাজিক, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে, যেখানে খেলোয়াড়রা হয়ে ওঠে নায়ক এবং খেলা হয়ে ওঠে জাতীয় গর্বের প্রতীক।কানাডায় জনসংখ্যার বড় একটি অংশ অভিবাসী এবং বহু জাতিগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে গঠিত। এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা তুলনামূলকভাবে ব্যস্ত ও ব্যাক্তিকেন্দ্রিক। অনেকেই খেলাকে একটি অবসর বিনোদন হিসেবে দেখে, যা কাজের ফাঁকে উপভোগ করা হয়। আবেগ এখানে কম নয়, তবে তা প্রকাশের পদ্ধতি ভিন্ন। এটি অনেকটা ব্যক্তিগত আনন্দ বা দুঃখের পর্যায়ে সীমাবদ্ধ, যেখানে পরিবার বা সামাজিক পরিসরে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায় না।

টেলিভিশন এবং ডিজিটাল মিডিয়ার প্রভাব
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়া বা লাতিন আমেরিকায় একটি ম্যাচ মানেই পাড়া-মহল্লা একত্রিত হয়ে বড় স্ক্রিনে খেলা দেখা, চিয়ার করা, বাজি ধরা এবং উৎসবে মেতে ওঠা। এসব অঞ্চলে টেলিভিশন এবং ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে খেলাধুলা প্রায় ধর্মীয় আচারের মতো পালন করা হয়। সেখানে খেলোয়াড়দের জীবন, ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও এমনকি দাড়ি বা হেয়ারস্টাইলও ফ্যানদের অনুকরণে পরিণত হয়। এর তুলনায় কানাডায় খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সাধারণ মানুষের তেমন আগ্রহ থাকে না।

যদিও কানাডার সমর্থকগোষ্ঠী এখনো বিশ্বমানের আবেগপ্রবণ নয়, তবে ভবিষ্যতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিবাসীদের আগমনের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার বা আফ্রিকার খেলাধুলার সংস্কৃতির প্রভাব বাড়ছে। ক্রিকেট লিগ, ফুটবল ফ্যান ক্লাব এবং আন্তর্জাতিক খেলা দেখার প্রবণতা বেড়েছে। কানাডার যুব সমাজ আজকাল বেশি করে ফুটবল ও ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে, যা আগামী প্রজন্মে একটি নতুন ধরনের ফ্যান কালচারের জন্ম দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *