কেন সবাই চুপিচুপি উত্তরায় বসবাস শুরু করছে?

ঢাকার অন্যতম আধুনিক ও পরিকল্পিত এলাকা উত্তরা। উন্নত অবকাঠামো, নিরাপত্তা এবং মানসম্মত নাগরিক সেবা—সব মিলিয়ে কেন সবাই এখন উত্তরায় চলে যাচ্ছে, জানুন বিস্তারিত। ছবিঃ ষ্টার
পরিকল্পিত নগরায়ণ ও আধুনিক অবকাঠামো
উত্তরা ঢাকার অন্যতম সুপরিকল্পিত আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত। ঢাকা শহরের অধিকাংশ এলাকায় যেখানে এলোমেলো নগরায়ণের ফলে জনদুর্ভোগ চরমে, সেখানে উত্তরা এক ব্যতিক্রমধর্মী উদাহরণ। এলাকাটি মূলত বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করা, প্রতিটিতে রয়েছে নির্ধারিত খেলার মাঠ, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক স্থাপনা। প্রশস্ত রাস্তা, চওড়া ফুটপাত এবং পর্যাপ্ত সবুজের সমন্বয়ে উত্তরা একটি নিঃশব্দ ও সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। নাগরিক সুবিধার দিক থেকেও উত্তরা অনেক এলাকাকেই ছাড়িয়ে গেছে। ফলে যারা পরিকল্পিত জীবনের স্বাদ নিতে চান কিংবা পরিবার নিয়ে একটু পরিপাটি ও আরামদায়ক পরিবেশে থাকতে চান, তাদের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠছে উত্তরা।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং পরিবারবান্ধব পরিবেশ
উত্তরা পরিবার নিয়ে থাকার জন্য একটি আদর্শ জায়গা বলে বিবেচিত হচ্ছে, মূলত এর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে। এলাকার বিভিন্ন সেক্টরে স্থাপিত হয়েছে নজরদারিমূলক ক্যামেরা ও নিরাপত্তা চৌকি, যেগুলোর তদারকি করছে আবাসিক সমাজ কমিটি ও পুলিশ বিভাগ একসাথে। এখানে নিয়মিত টহলরত পুলিশ ইউনিটের কারণে ছিনতাই, চুরি বা বিশৃঙ্খলার হার তুলনামূলকভাবে কম। শিশুদের জন্য পার্ক, খেলার মাঠ এবং স্কুলের পাশে নিরাপদ রাস্তা এই এলাকাটিকে করে তুলেছে আরও পরিবারবান্ধব। তাছাড়া, রাতেও নিরাপদে চলাফেরা করা যায়—যা ঢাকার অন্য অনেক এলাকায় দুষ্কর। যারা শিশু বা বয়স্ক সদস্য নিয়ে বসবাস করেন, তারা বিশেষভাবে উত্তরার পরিবেশকে উপযোগী মনে করছেন।
উন্নত সংযোগ ব্যবস্থা ও যোগাযোগ সুবিধা
উত্তরার সবচেয়ে বড় সুবিধাগুলোর একটি হলো এর উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। মেট্রোরেলের মত একটি আধুনিক গণপরিবহন এই এলাকা দিয়েই যাত্রা শুরু করেছে, যা ঢাকাবাসীর জন্য নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এ ছাড়াও উত্তরা থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর একেবারে কাছে হওয়ায় দেশ-বিদেশে যাতায়াত সহজ হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর সঙ্গে সড়ক সংযোগ যেমন—আব্দুল্লাহপুর, মহাখালী, মিরপুর ও গাজীপুর—এই এলাকাটিকে করেছে ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যারা প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করেন বা ব্যবসা পরিচালনা করেন, তাদের জন্য এই যোগাযোগ সুবিধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়সাশ্রয়ী।
উন্নয়নমুখী রিয়েল এস্টেট ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা
উত্তরায় বর্তমানে আবাসন খাত একটি বিশাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় ডেভেলপাররা এখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ফ্ল্যাট, কন্ডোমিনিয়াম এবং বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে বিনিয়োগ করছেন। জমির মূল্য প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এর সম্ভাবনা আরও বেশি। ফলে অনেকেই এখানে ফ্ল্যাট কিনে বিনিয়োগ হিসেবেও দেখছেন। উত্তরা বর্তমানে শুধু আবাসন নয়, ব্যবসার ক্ষেত্রেও একটি সম্ভাবনাময় এলাকা হয়ে উঠেছে। ব্যাংক, কর্পোরেট অফিস, আইটি কোম্পানি ও হেলথ কেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোও ধীরে ধীরে এখানে তাদের কার্যক্রম বিস্তৃত করছে। তাই যাঁরা স্মার্ট বিনিয়োগ করতে চান, তাদের অনেকেই এখন উত্তরাকে বেছে নিচ্ছেন।
শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদন—সব এক জায়গায়
উত্তরার আরেকটি বড় সুবিধা হলো এখানে নাগরিক জীবনের প্রয়োজনীয় সব সুবিধা একসাথে পাওয়া যায়। এখানে আছে দেশের সেরা কিছু ইংরেজি ও বাংলা মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল, স্কলাস্টিকা, সাউথব্রিজ এবং নর্থ সাউথ স্কুল। পাশাপাশি আধুনিক হাসপাতাল যেমন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও নারায়ণগঞ্জের মতো সুবিধাসম্পন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সহজে কাছাকাছি অবস্থান করছে। বিনোদনের জন্য আছে সিনেপ্লেক্স, বিলাসবহুল শপিং মল, স্টার রেটেড রেস্টুরেন্ট, পার্ক ও খেলার মাঠ—যা তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে প্রবীণদের সবার চাহিদা মেটায়। এই “অল-ইন-ওয়ান” সিস্টেম বাসিন্দাদের জীবনকে অনেক সহজ ও আরামদায়ক করে তুলেছে।
মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত—উভয়ের জন্য সমান সুযোগ
উত্তরার বৈচিত্র্যময় আবাসন ব্যবস্থা এটিকে নানা শ্রেণির মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে। যারা সীমিত বাজেটে ফ্ল্যাট ভাড়া খুঁজছেন, তাদের জন্য রয়েছে সাধ্যের মধ্যে একাধিক বিকল্প। অন্যদিকে, যারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে চান, তাদের জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক ফিচারযুক্ত অ্যাপার্টমেন্ট ও ডুপ্লেক্স ইউনিট। এ ছাড়াও রয়েছে সোসাইটি-ভিত্তিক আবাসন প্রকল্প, যা নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন এবং সামাজিকভাবে সুসংহত। উত্তরা এমন একটি জায়গা যেখানে বাসিন্দারা একসাথে চলাফেরা করে, সামাজিক বন্ধন গড়ে তোলে এবং নিরাপদ পরিবেশে বসবাসের নিশ্চয়তা পায়। ঢাকার গুলশান বা বনানীর বিকল্প হিসেবে অনেকেই এখন উত্তরাকে প্রথম পছন্দে নিচ্ছেন।
উত্তরা এখন শুধুমাত্র ঢাকার একটি আবাসিক এলাকা নয়, বরং একটি উদাহরণযোগ্য নগর পরিকল্পনার প্রতিফলন। সব দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, উত্তরা একটি সুসংগঠিত, নিরাপদ, আধুনিক এবং বসবাসযোগ্য শহরাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। শহরের কোলাহল থেকে খানিকটা দূরে থেকে আধুনিক নাগরিক সুবিধা উপভোগ করার এই সুযোগই অনেককে চুপিচুপি উত্তরার দিকে টানছে। এই গতি আরও বাড়বে মেট্রোরেলের পুরো কার্যক্রম শুরু হলে। যারা এখনই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন উত্তরায় চলে যাওয়ার, তারা নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার জীবনযাপনের পথে এগিয়ে চলেছেন।