ছাত্রনেতা শাম্মোর হত্যার প্রতিবাদে ঢাবিতে শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও ছাত্রদলের বিক্ষোভ

ডুয়েট ছাত্রনেতা শাম্মোর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র, শিক্ষক ও ছাত্রদলের তীব্র বিক্ষোভ। পড়ুন বিস্তারিত প্রতিবেদন। ছবিঃ টিবিএস
ডুয়েট ছাত্রনেতা শাম্মোর নির্মম হত্যাকাণ্ড
সম্প্রতি ডুয়েট (ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি) ছাত্রনেতা শাম্মো এক নির্মম ও রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। শাম্মো ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের (ছাত্রদল) একজন সক্রিয় নেতা, যিনি দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় গভীর ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের শিক্ষাঙ্গনে।
শাম্মোর মৃত্যুকে ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠছে—কে বা কারা এই হত্যার পেছনে জড়িত, কী ছিল এর উদ্দেশ্য, এবং কেন তার মতো একজন তরুণ নেতা এভাবে প্রাণ হারালেন। ছাত্ররাজনীতিতে বিরোধ এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে অনেকে এই ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন।
ঢাবিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতিবাদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা শাম্মোর হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সোমবার ক্যাম্পাসে এক বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এবং অপরাজেয় বাংলা চত্বরজুড়ে এদিন দিনব্যাপী চলে নানা কর্মসূচি—মানববন্ধন, মোমবাতি প্রজ্বালন ও মৌন মিছিল।
বক্তারা বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড শুধু একজন ছাত্রনেতাকে হত্যা নয়, বরং এটি দেশের গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ছাত্ররাজনীতির উপর আঘাত।” তাঁরা সরকারের কাছে দাবি জানান, অবিলম্বে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ছাত্রদলের বিক্ষোভ কর্মসূচি ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয়ভাবে এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে সারাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেয়। ঢাবি শাখা ছাত্রদলের ব্যানারে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শতাধিক নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করেন। মিছিল থেকে হত্যার বিচার, দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং শিক্ষাঙ্গনে সহিংসতা বন্ধের দাবি তোলা হয়।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, “শাম্মো হত্যার মাধ্যমে সরকার আবারও প্রমাণ করল তারা ভিন্নমত ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি কতটা অসহিষ্ণু।” তিনি আরও বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, এটি ছিল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চালিত রাজনৈতিক নিধন।”
শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন
এই ঘটনার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তার অভাব এবং রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা নিয়ে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসগুলো এখন আর নিরাপদ নয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার হুমকির মুখে পড়ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনার দ্রুত এবং নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন, না হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম হতাশা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন রাজনৈতিক সহিংসতার কেন্দ্র না হয়ে, বরং যুক্তিবাদী চর্চা ও গণতন্ত্রের আলোচনার কেন্দ্র হয়—এমন পরিবেশ তৈরির দাবি জানান সবাই।
সরকারি পক্ষ থেকে এখনও স্পষ্টভাবে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোনো বিবৃতি না আসায় ছাত্রসমাজের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, তদন্ত চলছে এবং কয়েকটি ক্লু শনাক্ত করা হয়েছে। তবে ছাত্রনেতারা বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না দোষীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে, ততক্ষণ তাদের আন্দোলন চলবে।