জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের বলপ্রয়োগে সরানো যাবে না

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে বলপ্রয়োগ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। উপদেষ্টা মাহফুজ জানান, ডিএমপি যেন শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বিস্তারিত পড়ুন। ছবিঃ সংগ্রহ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের বলপ্রয়োগে সরাতে নিষেধ: উপদেষ্টা মাহফুজ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (JnU) শিক্ষার্থীরা রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে এক টানা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের ৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে। এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষাবর্ষ দ্রুত শুরু, মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধান। এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা এসেছে—কোনো অবস্থাতেই বলপ্রয়োগ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সরানো যাবে না। সরকারের আইন ও প্রশাসনিক উপদেষ্টা মাহফুজ আনাম এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ডিএমপি (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ)-কে এই বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই ঘোষণা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফেরালেও, তাদের দাবির বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত আশ্বাস মেলেনি।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের গুরুত্ব এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া
উপদেষ্টা মাহফুজ আনাম স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেন যে, শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক অধিকারভিত্তিক। সরকার এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে চায় না, যা শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার হরণের দিকে যায়। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা যদি সহিংসতা না করে তাদের দাবি তুলে ধরে, তাহলে রাষ্ট্রের উচিত হবে তাদের কথা শোনা এবং যুক্তির ভিত্তিতে সমাধান খোঁজা।” এই বিবৃতির মাধ্যমে সরকার একদিকে শিক্ষার্থীদের সহানুভূতিপূর্ণ আচরণে উৎসাহ দিচ্ছে, অপরদিকে প্রশাসনকে বলপ্রয়োগ এড়িয়ে যেতে বলছে—যা বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
ডিএমপির নির্দেশনা ও অবস্থান
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সরকার কর্তৃক দেওয়া নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আন্দোলনকারীদের কোনো রকম জোর বা বলপ্রয়োগ ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেবলমাত্র সার্বিক নিরাপত্তা ও জনভোগান্তি যেন অতিমাত্রায় না বাড়ে, সে লক্ষ্যে দায়িত্ব পালন করছে। কাকরাইল এলাকার আশেপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, তবে তারা শিক্ষার্থীদের প্রতি বিরূপ আচরণ করছে না। বরং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও সহযোগিতার মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনার চেষ্টা করছে।
আন্দোলনের পটভূমি ও দাবির প্রকৃতি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের পেছনে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি এবং প্রশাসনিক উদাসীনতা মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শিক্ষাবর্ষে বারবার দেরি হওয়া, প্রয়োজনীয় একাডেমিক সুবিধার ঘাটতি এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছে। তারা মনে করেন, এই সমস্যাগুলো নিরসন না হলে তাদের ভবিষ্যত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই তারা তিন দফা দাবিতে কাকরাইলের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন। এসব দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের তৎপরতা না দেখে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন, এবং এখন তাদের আন্দোলন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

ছবিঃ বিসনেস স্টান্ডের
শিক্ষার্থীদের অবস্থান ও আন্দোলনের ভবিষ্যৎ
সরকারের পক্ষ থেকে বলপ্রয়োগের বিরোধিতা করার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা আশ্বাসের সঞ্চার করলেও তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন বন্ধ করবেন না। শিক্ষার্থীরা একযোগে বলছেন—“আমরা শান্তিপূর্ণ, কিন্তু আমাদের দাবি ন্যায্য এবং জরুরি।” তাদের এই অটল মনোভাব ইঙ্গিত দেয় যে, ভবিষ্যতে দাবিগুলো পূরণে বিলম্ব হলে আন্দোলনের ধারাও পরিবর্তিত হতে পারে। এক্ষেত্রে তারা আরও বৃহৎ পরিসরে আন্দোলনের ঘোষণা দিতে পারেন, যা প্রশাসনের ওপর চাপ বাড়াবে।
সরকারের দায়বদ্ধতা ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
জনগণ ও শিক্ষাবিদরা এই আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের ভূমিকাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন। কারণ, এটি শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা নয় বরং দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক অব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবি। অনেকেই বলছেন, সরকারের উচিত হবে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নের রোডম্যাপ তৈরি করা। এতে শুধু আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আসবে না, বরং শিক্ষাব্যবস্থায় জনগণের আস্থা বাড়বে। উপদেষ্টা মাহফুজের বক্তব্য সরকার যে সহনশীলতার পথে হাঁটছে তার একটি ইতিবাচক নিদর্শন, তবে তার পাশাপাশি বাস্তব পদক্ষেপও নেওয়া এখন সময়ের দাবি।