জুমার নামাজের পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গণসমাবেশের ডাক দিলেন হাসনাত

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা ও নিষিদ্ধ করার দাবিতে জুমার নামাজের পর ঢাকায় গণসমাবেশ আহ্বান করেছেন। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছিল। ছবি: বাংলা ট্রিবিউন
সমাবেশের প্রেক্ষাপট: রাজনৈতিক উত্তেজনার নতুন মাত্রা
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে, যেখানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সরাসরি মাঠে নেমেছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর মিন্টো রোডস্থ প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’র পূর্ব পাশে অবস্থিত ফোয়ারা চত্বরে একটি গণসমাবেশের ডাক দিয়ে তিনি রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছেন। এই সমাবেশটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চরম উত্তেজনাপূর্ণ, এবং জনগণ একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় আছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সক্রিয় অংশগ্রহণ
সমাবেশে শুধুমাত্র এনসিপির নেতাকর্মীরাই নয়, বরং জামায়াতে ইসলামি, হেফাজতে ইসলাম, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন সমবেত হয়েছে। রাতভর বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে তারা একত্রিত হয়েছেন রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিল আওয়ামী লীগকে “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে ঘোষণা করার জন্য এক অটুট দাবি। এছাড়া দলটির রাজনৈতিক নিবন্ধন বাতিলেরও দাবি উঠে এসেছে বক্তৃতা ও স্লোগানের মাধ্যমে। এতে বোঝা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগবিরোধী এই শক্তিগুলোর মধ্যে একটি একতাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।
হাসনাত আবদুল্লাহর কড়া ভাষণ: দাবি যতক্ষণ না মানা হবে ততক্ষণ আন্দোলন
সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আজকের দিনে বোঝা যাবে দেশের জনগণ কী চায়। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এই গণজোয়ার প্রমাণ করে দিয়েছে তারা কেবল একটি দল নয়, বরং একটি সন্ত্রাসী শক্তি হিসেবে বিবেচিত। আমরা অবস্থান করব যতক্ষণ না সরকার তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হলেও সরকার যদি বাধা সৃষ্টি করে তবে আন্দোলন আরও বৃহত্তর আকার ধারণ করবে। তার এমন বক্তব্যে অনেকেই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ রূপরেখার ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছেন।
সরকারের প্রতিক্রিয়া: এখনো অপেক্ষামাণ অবস্থা
বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে দেশ পরিচালিত হচ্ছে এবং নেতৃত্ব দিচ্ছেন নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস। ইতোমধ্যে সরকার আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করেছে। তবে আওয়ামী লীগের মূল সংগঠন নিষিদ্ধ হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, যদি এই ধরনের আন্দোলন অব্যাহত থাকে তবে সরকারকে বাধ্য হয়ে এ বিষয়ে বিবেচনা করতে হতে পারে।

ছবি: ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস
পটভূমি ও প্রাসঙ্গিকতা: আন্দোলনের শিকড়ে ছাত্র বিদ্রোহ
২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশজুড়ে এক বিশাল ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, যা সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ছাত্রলীগের সহিংসতা এবং রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামে। এই আন্দোলনের পরিণতিতে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং দেশত্যাগ করেন। সেই আন্দোলনের রেশ কাটেনি, বরং সেই সূত্র ধরেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বৃহত্তর প্রতিরোধ গড়ে উঠছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বর্তমান সমাবেশ সেই ধারাবাহিকতারই একটি ফল।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও হুঁশিয়ারি
হাসনাত ও তার সমর্থকেরা ঘোষণা দিয়েছেন যে, তারা এই আন্দোলন থামাবেন না যতক্ষণ না আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তাদের মতে, “যদি আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং তাদের রাজনৈতিক নিবন্ধন বাতিল করা হয়, তবেই আমরা ঘরে ফিরব।” এই বক্তব্য তাদের দৃঢ় অবস্থানের প্রতিচ্ছবি এবং ভবিষ্যতে আরও বড় কর্মসূচির ইঙ্গিতও বয়ে নিয়ে আসে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন
এই ধরনের গণসমাবেশ এবং দল নিষিদ্ধের দাবি রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কেউ এটিকে গণতন্ত্রের চর্চা হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ মনে করছেন এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রকাশ। যাই হোক, এ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ আরও বেড়েছে। জাতি এখন অপেক্ষা করছে—সরকার কী পদক্ষেপ নেবে এবং রাজনৈতিক সংকট কোন পথে এগোবে।