ঈদ বাজার ২০২৫: ঈদের আগে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম

কোরবানির ঈদ ২০২৫

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে টিসিবি শুরু করেছে ভর্তুকিমূল্যে চিনি, তেল, ডাল, ছোলা ও খেজুর বিক্রি। জানুন কোথায় ও কীভাবে পাবেন এই পণ্য। ছবিঃ প্রথম আলো

ঈদ সামনে, জনগণের চিন্তা বাজারদর

বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঈদুল আজহা একটি বড় ধর্মীয় উৎসব হলেও, এই সময়টাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি আর্থিক চাপ অনুভূত হয়। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলোর জন্য ঈদের বাজার একটি বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কোরবানির পশু কেনার পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম হঠাৎ করে বেড়ে যায়, ফলে পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। ঠিক এই সময়েই টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) প্রতিবছরের মতো এবারও এগিয়ে এসেছে সাধারণ মানুষের পাশে। সাশ্রয়ী দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে সরকার জনগণের ওপর থেকে চাপ কমাতে কাজ করছে। টিসিবি ঈদ বাজার কার্যক্রম ঈদের আগে বাজারে ভারসাম্য বজায় রাখতে একটি কার্যকর উদ্যোগ হিসেবে ইতিমধ্যে পরিচিতি পেয়েছে।

কোন কোন পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি?

চলতি ঈদুল আজহা উপলক্ষে টিসিবি যে পণ্যগুলো বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, চিনি, ছোলা এবং খেজুর। এই পণ্যগুলো সাধারণত ঈদের সময় সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন ও ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে। বাজারে যেসব পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকে, সেগুলোই বেছে নিয়ে সরকার ভর্তুকি দিয়ে সরবরাহ করে যাতে সাধারণ জনগণ কম দামে কিনতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বাজারে এক লিটার তেলের দাম যেখানে ১৬০-১৮০ টাকা, টিসিবি সেটি বিক্রি করছে ১০০-১১০ টাকায়। একইভাবে অন্যান্য পণ্যগুলোর ক্ষেত্রেও বড় অংকের মূল্যছাড় দেওয়া হচ্ছে। এতে করে মানুষের ঈদ প্রস্তুতি কিছুটা হলেও সহজ হচ্ছে এবং একধরনের আর্থিক স্বস্তি তৈরি হচ্ছে।

ডিলার ও বিক্রয় পদ্ধতি

টিসিবি সারা দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকায় নির্ধারিত ডিলার ও ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে এসব পণ্য বিক্রি করছে। বিশেষ করে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ধারী পরিবারগুলোর জন্য এই পণ্য পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ডিলারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে যাতে তারা স্থানীয় জনগণকে পর্যাপ্ত পণ্য সরবরাহ করতে পারেন। শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মোবাইল ট্রাকের মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকের দোরগোড়ায় পণ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তদারকির জন্য জেলা প্রশাসনের সহায়তায় স্থানীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং পুরো কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ডিজিটাল মেসেজিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের আগেই জানানো হচ্ছে কখন, কোথায়, কোন পণ্য পাওয়া যাবে।

টিসিবি ঈদ বাজারের প্রভাব বাজারে

টিসিবি যখন বাজারে পণ্য সরবরাহ করে, তখন বাজারে একটি মানসিক স্থিরতা তৈরি হয়। ব্যবসায়ীরা বুঝতে পারে যে, বাজারে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ রয়েছে এবং অতি মুনাফার সুযোগ সীমিত। এর ফলে বাজারে পণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং সাধারণ ক্রেতারাও নিশ্চিন্তে ঈদের কেনাকাটা করতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টিসিবির এই কার্যক্রম বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, টিসিবির পণ্য সরবরাহের পর বাজারে চিনি ও তেলের দাম কমে গেছে। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের সরবরাহ বেড়ে গেলে বাজারে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে।

টিসিবি ঈদ বাজার

ছবিঃ ঢাকা ট্রিবিউন

সরকারের সহযোগিতা ও বাজেট বরাদ্দ

সরকার টিসিবির কার্যক্রমকে সফল করতে প্রচুর বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে, যার মাধ্যমে ভর্তুকি প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসন সমন্বয় করে পুরো ব্যবস্থাটি চালাচ্ছে যাতে কোনো রকম দুর্নীতি বা অপব্যবহার না ঘটে। সরকার আরও জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জন্য আলাদাভাবে ভর্তুকির ফান্ড বাড়ানো হয়েছে যাতে ঈদ ছাড়াও সারা বছর ধরে টিসিবি কার্যক্রম চালাতে পারে। এই বাজেট ব্যবহারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে স্বাধীন অডিট দল নিয়োগ করা হয়েছে। ফলে জনগণের করের টাকায় পরিচালিত এই প্রকল্প যেন সঠিকভাবে ব্যবহার হয়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া ও চাহিদা

দেশজুড়ে টিসিবি ঈদ বাজার কার্যক্রমের ব্যাপক সাড়া পড়েছে। ফ্যামিলি কার্ডধারী বহু মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে হলেও সন্তুষ্ট যে তারা কম দামে প্রয়োজনীয় পণ্য পাচ্ছেন। সাধারণত ৫-৭ কেজি চিনি, ২-৩ লিটার তেল, ২ কেজি ডাল, ১ কেজি খেজুর এবং ২ কেজি ছোলা সরবরাহ করা হচ্ছে প্রতিটি পরিবারকে। অনেকেই বলছেন, এই সহায়তা ছাড়া ঈদের বাজার করার মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিল না তাদের। তবে কিছু জায়গায় অভিযোগ উঠেছে যে, পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত নয় কিংবা ডিলারদের ব্যবস্থাপনা দুর্বল। এসব সমস্যা দূর করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন ভোক্তারা।

টিসিবির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

টিসিবি কেবল ঈদের সময়েই নয়, ভবিষ্যতে সারা বছর নিয়মিতভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য ভর্তুকিমূল্যে পণ্য সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং আরও কয়েক লাখ পরিবারকে এর আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া টিসিবি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম চালু করতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসেই অনলাইনে ভর্তুকির পণ্য অর্ডার করতে পারবেন। এই ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা চালু হলে পণ্যের সরবরাহ আরও স্বচ্ছ, দ্রুত ও হয়রানিমুক্ত হবে বলে আশা করা যায়। এটি সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনের একটি অংশ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *