দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া: বিএনপির সর্বাত্মক প্রস্তুতি

দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তাকে স্বাগত জানাতে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রস্তুত করছেন বর্ণাঢ্য আয়োজন, যা দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। ছবি: ডেইলি ষ্টার
বিদেশযাত্রার চার মাস পর দেশে প্রত্যাবর্তন
দীর্ঘ চার মাস ধরে লন্ডনের একটি আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে দেশে ফিরছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থেকে তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও, এখনো তিনি পুরোপুরি সুস্থ নন। এই প্রত্যাবর্তন শুধুই একটি চিকিৎসাগত সমাপ্তি নয়—এটি একটি রাজনৈতিক ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে ইতোমধ্যেই বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।
পরিবারের সাথে আবেগঘন সফর
এই যাত্রায় তার সঙ্গে রয়েছেন তার দুই পুত্রবধূ—ডা. জুবাইদা রহমান (তারেক রহমানের স্ত্রী) এবং সৈয়দা শারমিলা রহমান। তারা বেগম জিয়াকে ঘিরে ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘ সময় ধরে। তারেক রহমান, যিনি ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে তার মাকে বিদায় জানাবেন। এই দৃশ্যটি পরিবার ও দলের জন্য আবেগঘন এক মুহূর্ত হয়ে উঠবে বলেই প্রত্যাশা।

ছবি: ঢাকা তুরবান
ঢাকায় বর্ণাঢ্য অভ্যর্থনার প্রস্তুতি
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে খালেদা জিয়ার আগমনের সময় তাকে অভ্যর্থনা জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নেতাকর্মীরা রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে, হাতে থাকবে পতাকা ও পোস্টার, মুখে স্লোগান। তার আগমনের পথ অর্থাৎ বিমানবন্দর থেকে গুলশানের ফিরোজা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে সাজানো হবে দলের পতাকা ও ব্যানার দিয়ে। দলের স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় নেতারা এবং যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা সক্রিয়ভাবে এতে অংশ নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত চিকিৎসা
খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দল জানিয়েছেন যে, তার লিভার, কিডনি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে এখনো নানা সমস্যা রয়েছে। যদিও উন্নত চিকিৎসার কারণে কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় আনা সম্ভব হয়েছে, তবে তাকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ঢাকায় ফিরে তিনি স্থানীয় চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকবেন এবং নিয়মিত চেকআপ করাবেন।
রাজনৈতিক আবহে নতুন উত্তেজনা
বেগম জিয়ার দেশে ফেরা এমন একটি সময়ে হচ্ছে যখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন নির্বাচনী প্রস্তুতি ও নানা ধরনের চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দলীয় নেতারা আশা করছেন, খালেদা জিয়ার উপস্থিতি আন্দোলনের মুডে নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং তার নামেই ভবিষ্যতের রণকৌশল নির্ধারণ করা হবে।
নেতাকর্মীদের মাঝে নবজাগরণ
তার দেশে ফেরাকে ঘিরে শুধু নেতারা নয়, তৃণমূল নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে হাজার হাজার কর্মী ঢাকায় এসে তাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন, পোস্টার, ফেস্টুন ও গান বানানো হয়েছে খালেদা জিয়াকে নিয়ে।
উপসংহার
বেগম খালেদা জিয়ার দেশে প্রত্যাবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনা। এটি শুধু একজন নেত্রীর ফিরে আসা নয়—এটি একটি দলের চেতনার পুনর্জাগরণ, একটি আন্দোলনের নতুন মোড় এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্ভবত এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এই আগমনকে ঘিরে যে আবেগ, প্রত্যাশা ও প্রস্তুতি চলছে, তা আগামী দিনের রাজনীতির পথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।