ছয় ঘণ্টার বিক্ষোভে নগর ভবন বন্ধ, শহরজুড়ে ভয়াবহ যানজট

ছয় ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভের জেরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবন তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে, ফলে পুরো শহরে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। আন্দোলনের কারণ ও প্রতিক্রিয়া জানতে বিস্তারিত পড়ুন। ছবিঃ প্রথম আলো
নগর ভবনে তালা, ছয় ঘণ্টার আন্দোলনে অচল শহর
ঢাকার অন্যতম প্রশাসনিক কেন্দ্রস্থল নগর ভবন আজ ছয় ঘণ্টাব্যাপী এক বিশাল বিক্ষোভের কবলে পড়ে তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এই অভূতপূর্ব অবস্থার কারণে নাগরিক সেবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। বিক্ষোভকারীরা মূলত বিভিন্ন দাবিতে নগর ভবনের প্রবেশপথ অবরোধ করে রাখে, ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে প্রবেশ করতে পারেননি। এই আন্দোলন শুধু প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায়নি, বরং নগরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও সম্পূর্ণভাবে স্থবির হয়ে পড়ে।
আন্দোলনের মূল কারণ ও দাবিসমূহ
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ ছিল যে, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন নাগরিক সমস্যা, যেমন—রাস্তার বেহাল দশা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুরবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এছাড়াও কয়েকটি ওয়ার্ডে করের হার বৃদ্ধির প্রতিবাদ, চাঁদাবাজি এবং ঠিকাদারি অনিয়ম নিয়েও আন্দোলনকারীরা সোচ্চার ছিলেন। তারা অভিযোগ করেন, বহুবার অভিযোগ জানানো হলেও কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোন কার্যকর সমাধান আসেনি। একারণেই তারা আজ নগর ভবনের সামনে সমবেত হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
এই প্রতিবাদ কর্মসূচি সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। বিক্ষোভকারীরা নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয় এবং নগর ভবনের আশপাশে অবস্থান নেয়। এই ছয় ঘণ্টা জুড়ে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, পাড়া-মহল্লার বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। তারা ব্যানার, ফেস্টুন, মাইকে স্লোগানের মাধ্যমে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। কোনো ধরণের সহিংসতা না থাকলেও প্রচুর ভিড় এবং সড়ক অবরোধের ফলে নগর ভবনের আশপাশে কার্যত যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
যানজটের ভয়াবহ রূপ
বিক্ষোভের প্রভাবে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহে প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে গুলিস্তান, মতিঝিল, পুরানা পল্টন, নিউ মার্কেট ও ধোলাইখাল এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে স্থবির হয়ে পড়ে। অফিসগামী মানুষ থেকে শুরু করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরাও দুর্ভোগে পড়ে। গণপরিবহন বন্ধ না হলেও ধীরগতির কারণে মানুষকে দীর্ঘ সময় রাস্তায় কাটাতে হয়। অনেকে বিকল্প রুটেও যানজটের কবলে পড়েন। ঢাকাবাসীর মতে, এমন তীব্র যানজট সম্প্রতি খুব কমই দেখা গেছে।

ছবিঃ ঢাকা ট্রিবিউন
নগর কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই আন্দোলন অপ্রত্যাশিত ও পরিকল্পনাবহির্ভূত ছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নাগরিক অভিযোগের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং ধাপে ধাপে সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। তবে তারা স্বীকার করেছেন যে, কিছু ওয়ার্ডে উন্নয়নকাজে বিলম্ব হচ্ছে এবং জনগণের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ প্রয়োজন। তারা আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান
ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয় যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করেছে এবং কোনো ধরণের বলপ্রয়োগ করা হয়নি। তবে তারা ভবিষ্যতে এ ধরনের আন্দোলনের ক্ষেত্রে পূর্ব সতর্কতা নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাও ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, কারণ নগর ভবন দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলোর একটি।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ও সাধারণ মানুষের হতাশা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই আন্দোলন ও যানজট নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে আন্দোলনের যৌক্তিকতা মেনে নিলেও, এভাবে নগরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। বিশেষ করে হাসপাতালে রোগী পরিবহন, অফিস টাইমে কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি এবং শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় পৌঁছাতে না পারার বিষয়গুলো নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে। অনেকে আবার এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব বা উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।