বিশেষ মতাদর্শে আস্থার কারণেই জেসিডির কথা শোনেন না ঢাবি উপাচার্য ও প্রক্টর

রিজভী আহমেদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস থাকার কারণেই জেসিডি নেতাকর্মীদের বক্তব্য ও অভিযোগ উপেক্ষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। ছবিঃ প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রিজভী আহমেদ

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টর একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস করায় ছাত্রদলের (জেসিডি) নেতাকর্মীদের অভিযোগ ও বক্তব্য আমলে নিচ্ছেন না। তিনি বলেন, “এটি একটি ন্যায়বিচারের বিষয় নয়, বরং মতাদর্শের বিষয়ে পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ ধরনের আচরণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও ছাত্র রাজনীতির জন্য চরম ক্ষতিকর।”

রিজভী আরও অভিযোগ করেন, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেসিডির নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিশ্চুপ থেকেছে। অভিযোগপত্র জমা দেওয়া সত্ত্বেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং উল্টোভাবে দেখা গেছে, যারা হামলার শিকার হয়েছেন তারাই বারবার প্রশাসনের কাছে গিয়ে বিচার প্রার্থনা করছেন, অথচ প্রতিক্রিয়া মেলে না।

পক্ষপাতদুষ্ট আচরণে ক্ষুব্ধ ছাত্রদল

ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি এখন একতরফাভাবে দলীয় রাজনীতিতে রঙিন। তারা অভিযোগ করেন, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের প্রতি প্রশাসনের অন্ধ সমর্থন রয়েছে, যার ফলে জেসিডির নেতাকর্মীদের ওপর দমনমূলক আচরণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। রিজভী বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে এক সময় সব মত ও পথের মিলনমেলা ছিল, আজ সেই জায়গায় দলীয়করণ আর নিপীড়ন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

তিনি আরও যোগ করেন, প্রশাসনের এমন পক্ষপাতমূলক অবস্থান কেবল জেসিডি নয়, বরং অন্য চিন্তাধারার ছাত্রদের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি একটি মুক্তবুদ্ধির চর্চার কেন্দ্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

শিক্ষাঙ্গনে মতাদর্শের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ

বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক মতাদর্শের আধিপত্য শিক্ষাব্যবস্থার নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। রিজভী আহমেদ বলেন, “উপাচার্য ও প্রক্টরের দায়িত্ব হওয়া উচিত সকল ছাত্র সংগঠনের কথা শোনা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং একটি সুষ্ঠু শিক্ষাব্যবস্থা বজায় রাখা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তারা শুধু একপক্ষের কথা শুনছেন এবং অন্যপক্ষকে উপেক্ষা করছেন।”

শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষকরাও এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মতাদর্শিক বৈষম্য শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে পিছিয়ে দিতে পারে এবং সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতির বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

প্রশাসনের নীরবতা গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য হুমকি

রিজভী আহমেদ তার বক্তব্যে আরও বলেন, প্রশাসনের এ ধরনের অবস্থান দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করছে। যদি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মতপার্থক্যকে সম্মান না করা হয় এবং ছাত্রদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে সেটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান, “দয়া করে ছাত্রদের রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে না দেখে, তাদেরকে শিক্ষার্থী ও নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করুন।”

তিনি সরকারের দিকেও ইঙ্গিত করে বলেন, এই ধরনের নীরব সম্মতি প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং অগণতান্ত্রিক শাসনেরই প্রতিফলন।

প্রক্টর, রাজনৈতিক বৈষম্য

ছবিঃ প্রথম আলো

ছাত্র রাজনীতিতে নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনতে আহ্বান

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে এবং দাবি জানিয়েছে, ছাত্র রাজনীতির মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে। তারা বলেন, “আমরা কোনো বিশেষ সুবিধা চাই না, চাই কেবল ন্যায্যতা।”

রিজভী আহমেদ তার বক্তব্যের শেষাংশে বলেন, “একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি বিচার না মেলে, সেখানে গণতন্ত্র শেখানো যায় না। ছাত্রদের চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে, আর তা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।”

সমালোচনার মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেক সাবেক শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নিরব ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, “যদি ছাত্র রাজনীতি পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তাহলে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব কেমন হবে?” বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক শিক্ষক ও বিশ্লেষকেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *