মেটা এআই অ্যাপে প্রিমিয়াম ফিচার ও বিজ্ঞাপন:

MetaApps

মার্ক জাকারবার্গ মেটার এআই অ্যাপে প্রিমিয়াম স্তর এবং বিজ্ঞাপন যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন, যা ব্যবহারকারীদের উন্নত ফিচার, গতিশীল পারফরম্যান্স ও কাস্টমাইজ অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। ছবি: টি ভার্জ

এআই অ্যাপের অভিজ্ঞতা বদলে দিতে যাচ্ছে মেটা

বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির প্রসার ঘটছে দ্রুতগতিতে। এই প্রতিযোগিতায় শীর্ষে থাকার লক্ষ্যেই মেটা তাদের নিজস্ব AI অ্যাপে নতুন প্রিমিয়াম স্তর চালুর ঘোষণা দিয়েছে। মার্ক জাকারবার্গ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মেটা এআই অ্যাপে এমন একটি সাবস্ক্রিপশন মডেল আনা হবে, যেখানে ব্যবহারকারীরা আরো উন্নত ফিচার উপভোগ করতে পারবেন।

এই প্রিমিয়াম স্তরে থাকবে দ্রুততর রেসপন্স টাইম, উন্নত জেনারেটিভ ইমেজ ফিচার এবং আরও বেশি পারসোনালাইজড পরামর্শ দেওয়ার ক্ষমতা। এর ফলে অ্যাপটির ব্যবহারে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন ও সাবস্ক্রিপশন—একসঙ্গে দুটি দিক

মেটার নতুন পরিকল্পনায় শুধু প্রিমিয়াম ব্যবহারকারীই নয়, ফ্রি ব্যবহারকারীদের জন্যও পরিবর্তন আসছে। তারা অ্যাপে বিজ্ঞাপন চালু করার পরিকল্পনা করছে, যা সম্ভবত চ্যাটবট এবং অন্যান্য ইন্টারেকশন-ভিত্তিক অংশে দেখা যাবে। এটি মেটার দীর্ঘমেয়াদী রাজস্ব মডেলের একটি অংশ, যা ফ্রি অ্যাকসেস বজায় রেখে আয় বাড়ানোর জন্য নেওয়া হচ্ছে।

জাকারবার্গ বলেন, “যখন আমরা এই অ্যাপটিকে বিলিয়ন ব্যবহারকারীর স্কেলে আনতে সক্ষম হবো, তখনই বিজ্ঞাপন ও প্রিমিয়াম স্তর বাস্তবায়ন করবো।” এটি থেকে বোঝা যায়, মেটা এখনও ব্যবহারকারীর অভ্যাস ও প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করছে।

এআইতে আরও বড় বিনিয়োগ: $৭২ বিলিয়ন লক্ষ্যমাত্রা

মেটা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে, তারা ২০২৫ সালের জন্য তাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যয় $৬৫ বিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে $৭২ বিলিয়নে উন্নীত করতে চায়। এর বড় একটি অংশ ব্যবহৃত হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তিতে। এই অর্থে ডেটা সেন্টার, GPU এবং এআই মডেল ট্রেনিং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে।

জাকারবার্গ বলেন, “আমরা শুধু AI তৈরি করছি না, বরং এটি কীভাবে কোটি কোটি মানুষের কাজে লাগবে তা নিয়ে ভাবছি। আমাদের লক্ষ্য শুধু প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ নয়, বরং ব্যবহারকারীর জীবনে বাস্তব পরিবর্তন আনা।”

AIupdate

ছবি: লোভেপিচ্

Meta AI অ্যাপের বিস্তৃতি ও কার্যক্ষমতা

বর্তমানে Meta AI অ্যাপটি Facebook, WhatsApp ও Instagram-এর মধ্য দিয়ে চালু করা হয়েছে, যেখানে এটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, ছবি তৈরি, এমনকি কনটেন্ট সাজেশন দেওয়ার মতো কাজ করে। তবে এখন তারা এটি একটি স্বতন্ত্র অ্যাপ হিসেবে বৃহত্তর জনগণের জন্য উন্মুক্ত করেছে।

এই অ্যাপের সাহায্যে ব্যবহারকারীরা GPT-সদৃশ পারফরম্যান্স উপভোগ করতে পারছেন, যেখানে তারা দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান, লেখালেখির সহায়তা, প্রযুক্তি বিষয়ক প্রশ্ন এবং সৃজনশীল কনটেন্ট তৈরিতে এআইকে কাজে লাগাতে পারছেন।

প্রতিযোগিতামূলক এআই বাজারে মেটার অবস্থান

বর্তমানে মেটা যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তা সরাসরি প্রতিযোগিতা করছে OpenAI (ChatGPT), Google (Gemini) এবং Anthropic (Claude)-এর সঙ্গে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই প্রিমিয়াম মডেল ও প্ল্যান চালু করেছে। মেটার প্রিমিয়াম স্তর চালু করা মানে হলো তারা এই দৌড়ে পিছিয়ে থাকতে চাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, AI অ্যাপসের ক্ষেত্রে যদি মেটা তাদের ব্যবহারকারী ভিত্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রিমিয়াম কনটেন্ট ও বিজ্ঞাপন সঠিকভাবে ইন্টিগ্রেট করতে পারে, তবে তারা আগামী কয়েক বছরে বড় ধরনের বাজার দখল করতে পারবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: ব্যবহারকারীর সম্পৃক্ততা সর্বোচ্চ পর্যায়ে আনা

মেটা ভবিষ্যতে AI অ্যাপটিকে আরও মানবিক ও বুদ্ধিদীপ্ত করে তুলতে চায়। এর অংশ হিসেবে তারা বাস্তবসম্মত কণ্ঠস্বর, ইনটেন্ট ডিটেকশন, এবং মাল্টিমোডাল ফিচার যেমন ভিডিও ব্যাখ্যা ও রিয়েলটাইম ভাষান্তর যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে।

এই ফিচারগুলো যুক্ত হলে অ্যাপটি কেবল একটি চ্যাটবট নয়, বরং একজন ভার্চুয়াল সহকারী হয়ে উঠবে যা ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *