শাপলা চত্বর ঘটনা: হেফাজতের প্রকাশিত শহীদ তালিকায় ৯৩ জনের নাম

২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার স্মরণে হেফাজতে ইসলাম ৯৩ জন নিহতের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকা ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক আবারও আলোচনায় এসেছে। ছবি: অয়েলি অবসাবের
শাপলা চত্বরের রাত
২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে এক নজিরবিহীন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাবেশের পর রাতভর অভিযান চালানো হয়। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশ শেষ পর্যন্ত পুলিশের ব্যাপক অভিযান ও সহিংসতার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। বহু মানুষ নিহত হয় বলে তখন দাবি উঠেছিল, যদিও সরকারিভাবে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম দেখানো হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়। বিভিন্ন সংস্থা, সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করলেও এ পর্যন্ত এককভাবে নিরপেক্ষ কোনো তদন্ত হয়নি।
হেফাজতের নতুন তালিকা: ৯৩ জনের দাবি
সম্প্রতি হেফাজতে ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে তারা ৯৩ জন নিহতের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে। সংগঠনটির দাবি, এরা সবাই শাপলা চত্বরে সেই রাতের ঘটনায় শহীদ হয়েছেন।
তালিকায় নাম, ঠিকানা ও কখন কোথায় তারা নিহত হন সে সম্পর্কিত কিছু তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকাটি সামাজিক মাধ্যমে এবং সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই এই পদক্ষেপকে হেফাজতের পক্ষ থেকে “সত্য তুলে ধরার চেষ্টা” হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সরকার ও বিরোধী পক্ষের প্রতিক্রিয়া
সরকারপক্ষ বরাবরের মতোই হেফাজতের এই দাবিকে “মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে নাকচ করেছে। তারা বলছে, কোনো বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই এমন দাবি জাতিকে বিভ্রান্ত করে এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যদিকে, বিরোধী পক্ষ ও কিছু মানবাধিকার সংস্থা হেফাজতের দাবি উপেক্ষা না করে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। তারা মনে করে, নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
পরিবার ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
হেফাজতের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়া অনেক নিহতের পরিবার একে “দীর্ঘ প্রতীক্ষার স্বীকৃতি” হিসেবে দেখছেন। কেউ কেউ বলছেন, তারা এতদিন ধরে সন্তান বা পরিবারের সদস্যের মৃত্যুর স্বীকৃতির জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
তবে তালিকায় কয়েকটি নাম নিয়ে বিভ্রান্তিও দেখা দিয়েছে, কারণ তাদের কেউ কেউ জীবিত রয়েছেন বলে প্রতিবেদন এসেছে। এটি তালিকার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ভবিষ্যৎ করণীয় ও জাতীয় চেতনা
এই ঘটনার পুনরুজ্জীবন আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সহিংসতা কখনোই দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। জাতীয় ঐক্য, নিরপেক্ষ তদন্ত এবং সত্য প্রকাশই ভবিষ্যৎ সংঘাত রোধের জন্য প্রয়োজন।
এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের উচিত নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করে সত্য উদঘাটন করা। একমাত্র স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তই পারে এমন ট্র্যাজেডিকে ইতিহাসের পাতায় ন্যায়ভিত্তিকভাবে স্থান দিতে।