সরকার অনুমোদন দিল সাইবার সিকিউরিটি অর্ডিন্যান্স ২০২৫

ডিজিটাল_আইন

সরকার ২০২৫ সালের সাইবার সিকিউরিটি অর্ডিন্যান্স অনুমোদন করেছে, যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকারকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং অনলাইন জুয়াকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ছবি: সংগ্রহ

সাইবার সিকিউরিটি অর্ডিন্যান্স ২০২৫ অনুমোদিত, যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত সরকারের

বাংলাদেশ সরকার ২০২৫ সালের সাইবার সিকিউরিটি অর্ডিন্যান্স আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে। এই নতুন অর্ডিন্যান্সে ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকারকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা দেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। একইসঙ্গে অনলাইন জুয়া ও বেটিং কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পথ উন্মুক্ত হয়েছে।

এই আইনটি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিরাপত্তা ও নৈতিকতা রক্ষার লক্ষ্যে একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। সরকারের দাবি, এটি একটি “ডিজিটালি দায়িত্বশীল সমাজ” গঠনের ভিত্তি তৈরি করবে।

ইন্টারনেট এখন নাগরিক অধিকার: ডিজিটাল সমতা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি

এই অর্ডিন্যান্সে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকারকে মৌলিক নাগরিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতিটি নাগরিকের ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা দেওয়া যাবে না, এবং সরকার বাধ্য থাকবে প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সব স্থানে ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে।

এই সিদ্ধান্ত ডিজিটাল বিভাজন কমাতে সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামের শিক্ষার্থী, কৃষক, এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটি একটি সাহসী ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।

অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ: কঠোর শাস্তির বিধান

নতুন অর্ডিন্যান্সে উল্লেখ আছে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যেকোনো ধরনের জুয়া বা বাজি খেলা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। অনলাইনে ক্যাসিনো, স্পোর্টস বেটিং, লটারির মতো কার্যক্রম পরিচালনা করা বা অংশ নেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

আইন অনুযায়ী, এই ধরনের প্ল্যাটফর্ম পরিচালনাকারী বা ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে অনলাইন আসক্তি, অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি এবং সামাজিক অবক্ষয় রোধের পথ প্রশস্ত হবে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা।

সাইবার_সিকিউরিটি

ছবি: এলাৰ্মহারম উনিভের্সিটি

তথ্য সুরক্ষা ও হ্যাকিং প্রতিরোধে আধুনিক বিধান

অর্ডিন্যান্সের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো তথ্য সুরক্ষা ও সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ। আইন অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের ডেটাবেইসে হ্যাকিং, তথ্য চুরি, বা ফিশিং অ্যাটাকের ক্ষেত্রে দোষীকে গুরুতর শাস্তি দেওয়া হবে।

সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য সাইবার সিকিউরিটি অডিট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে তাদের তথ্য সিস্টেমে নির্ধারিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে এবং যেকোনো সাইবার হামলার ঘটনায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।

তরুণদের জন্য সাইবার সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি

সরকার তরুণদের মধ্যে সাইবার সচেতনতা বাড়াতে নতুন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাইবার সিকিউরিটি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পাশাপাশি, যুব সমাজকে অনলাইন নিরাপত্তা, গোপনীয়তা রক্ষা ও দায়িত্বশীল ডিজিটাল আচরণের জন্য উৎসাহিত করা হবে।

সরকারি এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শুধু ইন্টারনেট ব্যবহার শেখানো নয়, বরং সেটিকে নিরাপদ ও ইতিবাচকভাবে ব্যবহারের শিক্ষা দেওয়াই এই অর্ডিন্যান্সের অন্যতম উদ্দেশ্য।

আন্তর্জাতিক মান অনুসারে আইন প্রণয়ন

এই আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান ও চর্চা অনুসরণ করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের GDPR, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Cybersecurity Framework, এবং ভারত, সিঙ্গাপুরের মতো দেশের মডেল বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের বাস্তবতায় তা রূপান্তরিত করা হয়েছে।

এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ডিজিটাল চুক্তি ও বিনিয়োগে আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি খাতের বিনিয়োগকারীরা।

সুরক্ষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে এক ধাপ অগ্রগতি

সাইবার সিকিউরিটি অর্ডিন্যান্স ২০২৫ শুধু একটি আইন নয়; এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন—একটি নিরাপদ, সমতাভিত্তিক এবং নৈতিক ডিজিটাল সমাজ গঠনের রূপরেখা। ইন্টারনেটের নাগরিক অধিকার ঘোষণার মাধ্যমে সরকার প্রযুক্তির সুযোগ সবার জন্য সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একইসঙ্গে অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করে সমাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে একটি সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে।

এই আইন কার্যকর হওয়ার পর, দেশের সাইবার স্পেস আরও সুশৃঙ্খল ও সুরক্ষিত হবে—এমনটাই প্রত্যাশা করছে গোটা জাতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *