সাবেক এমপি মমতাজ বেগম ধানমণ্ডি থেকে গ্রেফতার

সাবেক এমপি গ্রেফতার

সাবেক এমপি মমতাজ বেগমকে ধানমণ্ডি থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব ও পুলিশ। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে এই অভিযান। জানুন বিস্তারিত তথ্য, প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। ছবিঃ সংগ্রহ

সাবেক এমপি মমতাজ বেগম ধানমণ্ডি থেকে গ্রেফতার

ঢাকা, ১৩ মে ২০২৫
রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমণ্ডি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য এবং দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা রাজনৈতিক নেতা মমতাজ বেগমকে। মঙ্গলবার বিকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ইউনিটের সমন্বয়ে পরিচালিত এক গোপন অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার বাসায় উপস্থিত ছিলেন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন এবং কিছু রাজনৈতিক অনুসারী, যাদের সামনে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।

গ্রেফতারের নেপথ্যে দীর্ঘমেয়াদি তদন্ত

সূত্র বলছে, মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একাধিক অভিযোগ জমা হচ্ছিল। তদন্তে উঠে এসেছে সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত, সরকারি জায়গা দখল, এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রভাব খাটানোর বেশ কিছু তথ্য। গত কয়েক মাস ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এবং র‍্যাব যৌথভাবে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালিয়ে আসছিল।

তদন্তে মমতাজ বেগমের নামে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নামে থাকা একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিদেশে সম্পদ, এবং রাজস্ব ফাঁকি সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। এসব তথ্যের ভিত্তিতে মামলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে তাকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

অভিযানের সময়কার পরিস্থিতি

মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে ধানমণ্ডির ৮ নম্বর সড়কের একটি বিলাসবহুল ভবনে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব ও পুলিশের বিশেষ দল। সাদা পোশাকে আসা কর্মকর্তারা ভবনটি ঘিরে ফেলে এবং বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। অভিযান চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা, যার মধ্যে মমতাজ বেগমের ব্যক্তিগত ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, কাগজপত্র ও একটি সুরক্ষিত সিন্দুক জব্দ করা হয়।

অভিযান চলাকালীন এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থলের আশেপাশে ভিড় জমায়। কেউ কেউ মোবাইলে ভিডিও ধারণের চেষ্টা করে, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সরে যেতে অনুরোধ করেন।

গ্রেফতারের পরপরই মমতাজ বেগমের পরিবারের সদস্যরা এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ “পুরোটাই ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত”। পরিবারের দাবি, তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন না এবং বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধেও কোনো প্রকাশ্য বক্তব্য দেননি।

তার আইনজীবী জানান, “আমরা আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছি। গ্রেফতারের বৈধতা নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট দাখিল করা হবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আদালতে সত্যের জয় হবে।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ

এই গ্রেফতারের পর দেশের রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলগুলো এটিকে সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণ হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা বলছে, সরকারের সমালোচকদের টার্গেট করেই এই ধরনের গ্রেফতার করা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি দলের নেতারা বলছেন, “আইনের চোখে সবাই সমান। অপরাধ করলে তার বিচার হবেই।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই গ্রেফতার বর্তমান সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিরই বহিঃপ্রকাশ। তবে অনেকে এটিকে ভবিষ্যতের নির্বাচনী কৌশলের অংশ বলেও মন্তব্য করছেন।

অতীতে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড

মমতাজ বেগম তার রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন সময় বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও মন্তব্যের জন্য আলোচনায় ছিলেন। একাধিকবার সংবাদমাধ্যমে তার সম্পদের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যদিও তিনি তা বরাবরই অস্বীকার করেছেন। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা এবং সেখানে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ আগেও উঠেছিল।

এছাড়া, সরকারি দল থেকে পদত্যাগের পর থেকে তিনি রাজনৈতিকভাবে বেশ নিস্ক্রিয় থাকলেও গোপনে কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন বলে গোয়েন্দা তথ্য সূত্রে জানা গেছে।

তদন্তের ভবিষ্যৎ ধারা

তদন্তকারী সংস্থাগুলো বলছে, মমতাজ বেগমের গ্রেফতারের মাধ্যমে তদন্ত এখন আরও গভীরে যাবে। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও’র কার্যক্রমও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্তের পরবর্তী ধাপে যদি আরও নতুন তথ্য উঠে আসে, তাহলে গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়তে পারে এবং মামলাটি বহুল আলোচিত দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে পরিণত হতে পারে।

মমতাজ বেগমের গ্রেফতারে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াও মিশ্র। অনেকে বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল অনেক আগেই। আবার কেউ কেউ বলছেন, এটা সরকারের বিরোধীদের ভয় দেখানোর কৌশল। সোশ্যাল মিডিয়াতে এ নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য দেখা গেছে, যেখানে কেউ তাকে ‘দুর্নীতির প্রতীক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, আবার কেউ তাকে ‘রাজনৈতিক বলি’ বলেও চিহ্নিত করেছেন।

উপসংহার

সাবেক এমপি মমতাজ বেগমের গ্রেফতার বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি শুধু একজন রাজনীতিবিদের গ্রেফতার নয়, বরং এটি একটি বার্তা—আইনের চোখে কেউই দায়মুক্ত নয়। এখন দেখার বিষয়, তদন্ত কতটা স্বচ্ছ এবং কার্যকর হয়, এবং এই মামলার মাধ্যমে দেশের দুর্নীতির চিত্র কতটা উন্মোচিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *